এই কি জীবন.... এর চেয়ে ভালো মরণ
লিখেছেন লিখেছেন মামুন ০১ অক্টোবর, ২০১৪, ১২:১৬:০২ দুপুর
সোহেল সাহেব তিন সন্তানের জনক। দুই ছেলের বড় জন পলিটেকনিক থেকে ডিপ্লোমা কমপ্লিট করে একটি দেশী গ্রুপে চাকুরিরত। ছোট ছেলে গার্মেন্ট-ঝুট ব্যবসায় জড়িত। এক মেয়ে স্কুলের গণ্ডী পার হয়নি। সোহেল সাহেব পঞ্চাশ পার হয়েছেন গত ডিসেম্বরে। একটি দেশী পোশাক রপ্তানি কারখানার একটি গুরুত্বপুর্ণ সেকশনের ব্যবস্থাপক পদে কর্মরত রয়েছেন।
সালমা সোহেল সাহেবের সেকশনে মান-নিয়ন্ত্রণ পরিদর্শক। অনেক বছর ধরেই এই কারখানাটিতে রয়েছে। সোহেল সাহেব তাদের সকলের বস। সেই সুবাদে বাহ্যিক চোখে সালমার চাকুরিতে উন্নতি-অবনতি সবকিছুই সোহেল সাহেবের ইচ্ছাধীন (আল্লাহপাক মাফ করুক আমাকে)। সালমা অফিসের সাথেই আরো কয়েকজন চাকুরিজীবী মেয়ের সাথে একটি বাসা নিয়ে থাকে। সে অবিবাহিত এবং গ্রামের বাড়িতে ওর উপর নির্ভরশীল আরো তিনজন সদস্য রয়েছে।
ধীরে ধীরে সোহেল সাহেব এবং সালমা কাছে আসে। বয়সের ভীষণ পার্থক্য থাকার পরেও সোহেল সাহেবের চরিত্রহীনতা এবং তার কামুক স্বভাবের কারণে সালমাকে কাছে আসতে বাধ্য করেন তিনি। সালমার সামনে দুটি পথ খোলা ছিল- এক. চাকুরী ছেড়ে অন্যত্র চলে যাওয়া। দুই. ফ্যাক্টরী ম্যানেজারের কাছে জানানো। কিন্তু সোহেল সাহেব টপ ম্যানেজমেন্টের সাথে আত্মীয়তার বন্ধনে আবদ্ধ। সেজন্য সালমার এই দুইটি পথের একটিতেও হাঁটা হল না। আর মুসলমান হয়েও সে ইসলামী ভাবধারায় নিজেকে গড়ে না নেয়াতে, ঈমানী কমজোরির কারণে একজন বিবাহিত মধ্যবয়স্ক পুরুষের সাথে বিবাহ বহির্ভুত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়তে বাধ্য হয়।
অতিসম্প্রতি গাজীপুর চান্দরার কাছে সোহাগ পল্লী নামের একটি রিসোর্ট এবং পিকনিক স্পটে দিনভর গোয়েন্দা-পুলিশের অভিযান চলে। অসামাজিক কার্যকলাপের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে ৯৩ জন নারী-পুরুষকে অসামাজিক কাজ করার সময় হাতে-নাতে গ্রেফতার করা হয়। এদের ভিতরে সোহেল সাহেব এবং সালমাও ছিল।
পরবর্তীতে কারখানাতে ঘটনাটি জানাজানি হয়ে যায়। একজন ম্যানেজার লেভেলের মানুষ নিজ সেকশনের একজন মেয়েওর সাথে এই বয়সে এভাবে অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়েছেন জেনে সবাই হতবাক হয়ে পড়ে এবং ঘৃনায় মুখ ফিরিয়ে নেয়। ইতোপুর্বে একজন সুপারভাইজার এবং এবং একজন মেয়ে অপারেটরের ভিতরকার এরকম অবৈধ সম্পর্কের কারনে দু'জনকেই চাকুরী থেকে বাদ দেয়া হয়েছিল। তাই সকলে উন্মুখ হয়ে ছিল এই ন্যাক্কারজনক ঘটনার একটি দৃষ্টান্তমূলক বিচারের।
পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ খুব দ্রুত ঘটে যায়। সোহেল সাহেব জামিনে বের হয়ে আসেন দু'দিন পরে। এসেই নিজের প্রভাব খাটিয়ে সালমাকে রাতের আঁধারেই এলাকা ত্যাগ করতে বাধ্য করেন। এ ক্ষেত্রে এলাকার বখাটে ছেলেদেরকে টাকা দিয়ে ম্যানেজ করেন। পরের দিন তিনি বিকেলের দিকে কারখানায় প্রবেশ করেন। এবং গত কয়েকদিনের জন্য লীভ আবেদন করেন। ম্যানেজমেন্ট মঞ্জুর করে এবং তিনি আগের মতই দাপটের সাথে নিজ সেকশনে চাকুরী করে চলেছেন। আর সালমার খবর জানা যায় নি। সে হয়তো অসহায় অবস্থায় নিজের গ্রামের বাড়িতেই ফিরে গেছে। হয়তবা অন্য কোথাও জীবিকার তালাশে এদিক ওদিক ঘুরে বেড়াচ্ছে।
এই একটি ঘটনা দিয়ে আমার প্রিয় মাতৃভূমির কয়েকটি দিক সামনে চলে এসেছে।
প্রথমতঃ বিচার বলতে কিছুই নেই। যার ক্ষমতা এবং অর্থ রয়েছে, পাল্লা তার দিকে ঝুলে পড়ে।
দ্বিতীয়তঃ সমাজে বিদ্যমান শ্রেনী বৈষম্য খুবই নগ্নভাবে আমাদের সমাজে তার মুখোশ উন্মোচিত করছে।
তৃতীয়তঃ আমাদের সমাজে নারীরা পুরুষদের দ্বারা সেই আগের মতই নির্যাতিত হচ্ছে।
যদিও দেশের সর্বোচ্চ পর্যায়ে এখন নারী-নেত্রিত্ব বিদ্যমান; তবুও নারী সকল স্তরেই নিষ্পেষিত হয়ে আসছে। উল্লেখিত ঘটনাটিতে একই অপরাধে অভিযুক্ত হয়েও শুধুমাত্র নারী হবার কারনে সকল দায় একমাত্র সালমাকেই বহন করতে হল। সকল লজ্জাও যেন ওর, বিচারের আগেই ওর বিচার করে পুরুষ শাসিত সমাজে পুরুষের দোষ ঢাকবার চেষ্টা করা হল। আর নির্লজ্জ পুরুষটি সবার ঘৃনার দৃষ্টিকে উপেক্ষা করে স্বাভাবিক ভাবে ডিউটি করে যাচ্ছে।
একজন পুরুষ হিসাবে নিজেকে আজ অনেক তুচ্ছ মনে হল। আর যারা এই ঘটনার বিচারকের দায়িত্ব পালন করেছেন- তাদের প্রতি আমার মনের সকল ঘৃণা একসাথে ছুড়ে দিলাম। আর একজন মুসলমান হিসাবে যখনি ভাবতে গেলাম, সেখানে একজন বিবাহিত পুরুষ হয়েও এই ব্যভিচার করাতে সোহেল সাহেবের ছঙ্গেসার বা পাথর নিক্ষেপে মৃত্যুদন্ড হবার কথা। আর অবিবাহিত হবার কারণে সালমার জন্য ১০০ টি বেত্রাঘাত। কিন্তু কি হল? সম্পুর্ণ উল্টো হল না?
মৃত্যুদন্ডের আসামী বা-ইজ্জত খালাস এবং সাথে পুরস্কার পেলো। আর লঘু দন্ডের আসামীর মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হল।
বাহ! ধন্যবাদ এই বিদ্যমান সমাজ ব্যবস্থা এবং সমাজপতিদের!!
বিষয়: বিবিধ
১১২৭ বার পঠিত, ২২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মৃত্যুদন্ডের আসামী বা-ইজ্জত খালাস
এবং সাথে পুরস্কার পেলো। আর লঘু
দন্ডের আসামীর মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হল।
বাহ! ধন্যবাদ এই বিদ্যমান সমাজ
ব্যবস্থা এবং সমাজপতিদের!!
এর,চাইতে বলার আর কিছুই নাই। আমাদের দেশ আমাদের আইন!!!?
অনুভূতি রেখে যাবার জন্য অনেক শুভকামনা আপনার জন্য। ফেসবুক আইডি দিয়েছিলাম; কিন্তু যোগাযোগ তো হল না।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
সামাজিক এই অসংগতিগুলো এতো ব্যাপক আকার ধারণ করছে যে, মানুষ বিষয়গুলো কে স্বাভাবিক হিসেবে গ্রহন করে নিয়েছে যেন....!
নৈতিক অনুভুতির দৈন্যতাই এর কারণ।
সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করায় ধন্যবাদ ও জাযাকাল্লাহ আপনাকে.....।
কিন্তু এই অসঙ্গতিকে সবাই যদি এভাবে এড়িয়ে চলে, তবে আমার সন্তান তথা পরবর্তী প্রজন্মের জন্য চলার পথকে কি কন্টাকাকীর্ণ করেই রেখে যাচ্ছি না??
ধন্যবাদ আপনাকে।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
সহমত আপনার সাথে।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
আপনার কথায় একমত।
শুভেচ্ছা রইলো। জাজাকাল্লাহু খাইর।
তবুও আশেপাশেই যখন ঘটে চলেছে, ভাবতে হচ্ছে। এর প্রতিকারও করার প্রয়োজন, নাহলে এভাবে চলতে থাকলে একসময় আমার আপনার পরিবারেও এর ছোঁয়া লাগবে।
ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য।
বাস্তবতাকেই তুলে ধরেছেন ভাই! মানুষের মাঝে আজ ধর্মীয় অনুশীলন তো নেই ই সাথে সামান্য মানবিক নৈতিকতাবোধও নেই!
শুকরিয়া শ্রদ্ধেয়!
খুব সুন্দর কথা বলেছেন। আপনার সাথে সহমত। যদি ধর্মীয় অনুশীলন এবং শরীয়তের পাবন্দি সালমার থাকত, তবে সে ঈমানী বলে বলীয়ান হয়ে এই জঘন্য কাজে জড়াতো না।
অনেক শুভেচ্ছা আপনার জন্যও শ্রদ্ধেয়া।
অবিচারের হন্য সমাজকেই শুধু দোষারোপ করে গেলেন??
আসলে তো সালমা-ই দোষী!! যদি সে তার আত্মরক্ষা ও চরিত্ররক্ষায় সচেতন থাকতো এবং ইসলামী আকিদা-আখলাক মেনে চলতো তবে অবশঈ আল্লাহতায়ালা তাকে হেফাজত করতেন, ঐ চাকরী গেলে অন্য চাকরী জুটে যেতো
আল্লাহতায়ালার ওয়াদা রয়েছে-
আর তাঁর ওয়াদা কখনো অপূর্ণ থাকেনা
তবে হ্যাঁ- সমাজ দোষী বটে- সালমাকে ঠিকমত তৈরী না করার জন্য, আর সোহেলকে রুখে না দেবার জন্য
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ, জাযাকাল্লাহ
ধন্যবাদ।
সালমাও যে দোষী তাও কিন্তু দেখিয়েছি ভাইয়া- "আর মুসলমান হয়েও সে ইসলামী ভাবধারায় নিজেকে গড়ে না নেয়াতে, ঈমানী কমজোরির কারণে একজন বিবাহিত মধ্যবয়স্ক পুরুষের সাথে বিবাহ বহির্ভুত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়তে বাধ্য হয়। "- এখানে তা উল্লেখ করেছি।
সুন্দরভাবে অনুভূতি রেখে যাবার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
মূলতঃ দোষ হল আমাদের নষ্ট সমাজ ব্যবস্থার। ছোটবেলা থেকেই নৈতিকতা শিক্ষা দেয়া হয় না। আধুনিকতার নামে বেয়াহায়াপনা শেখানো হয়।
যারা ধর্মীয় অণুশাসন মেনে চলার চেষ্টা করে পারিবারিকভাবে তাদেরকে কোণঠাসা করে রাখা হয়। তাইতো আমাদের সমাজে আজ সালমা ও সোহেলের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে।
চমৎকার পো্স্টের জন্য ধন্যবাদ।
সহমত আপনার সাথে। খুব চমৎকার ভাবে মূল গলদটি তুলে ধরলেন। ঘটনাটি আমার নিজের চোখে দেখা-এজন্য খুব মর্মাহত হলাম এই একপেশে বিচার ব্যবস্থার প্রতিফলন দেখে।
সুন্দর অনুভূতি রেখে গেলেন, এজন্য অনেক শুভেচ্ছা আপনাকে।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
মন্তব্যটাও 'ফ্যান্টাস্টিক' হয়েছে ভাই
শুভেচ্ছা রইলো।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
ভালো বলেছেন।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
মন্তব্য করতে লগইন করুন